রাফিয়া রহমানের পাঠ প্রতিক্রিয়ায় ’১০০০ গজ’

প্রতিক্রিয়া লিখেছেন: রাফিয়া রহমান

নাম: ১০০০ গজ
◑লেখক: মার্ক ডওসন
◑অনুবাদক: ফাহাদ আল আব্দুল্লাহ
◑জনরা: এডভেঞ্চার থ্রিলার
◑প্রচ্ছদ: লর্ড জুলিয়ান
◑প্রকাশনী: ঐশ্বর্য প্রকাশ
◑প্রথম প্রকাশ: নভেম্বর ২০২০
◑পৃষ্ঠা সংখ্যা: ৭৬
◑মুদ্রিত মূল্য: ১৬০/-

ফটো ক্রেডিট: রাফিয়া রহমান

𝕬𝖘 𝖑𝖔𝖓𝖌 𝖆𝖘 𝖙𝖍𝖊𝖞 𝖉𝖔𝖓’𝖙 𝖐𝖓𝖔𝖜,
𝕴 𝖆𝖒 𝖘𝖆𝖋𝖊…
— 𝔅𝔞𝔫𝔤𝔞𝔪𝔟𝔦𝔨𝔦 ℌ𝔞𝔟𝔶𝔞𝔯𝔦𝔪𝔞𝔫𝔞

❝এজেন্ট❞- শব্দ শুনলেই মনের মধ্যে দুর্ধর্ষ ফিগার কল্পনা করে ফেলি আমরা, যে থাকবে লোকচক্ষুর আড়ালে। লুকে হবে পরিপাটি কেতাদুরস্ত, তীক্ষ্ণ বুদ্ধিদীপ্ত আর রণকৌশলে পারদর্শী। অবশ্য এমনটা নাহলে হয়ও না অনেক সময়। অসম্ভব মিশন যার কাঁধে অন্যদের থেকে এডভান্স না হলে কি চলে! বই আর মুভির কল্যাণে এমনটাই চরিত্র আমরা জানি একজন এজেন্টের। মিশনই যার সব। কিন্তু প্রতিবারই কি এমন হয় যে একজন এজেন্ট মিশন কমপ্লিট করে শান্তিতে ঘরে ফিরে আসে? কখনও কি এমন হয় না যে টার্গেট পূরণের জন্য নির্দোষের বলি দিতে হয়? মিশনের স্বার্থে কি এজেন্ট ভুলে যায় নিষ্পাপের জীবনের মূল্য? নাকি কালোছায়া হয়ে অতীতের রক্তাক্ত স্মৃতি সাথেই জড়িয়ে পড়ে…

● আখ্যান —
মরুভূমি।
একটা গ্রাম।
সেখানে মাদ্রাসা।
বাচ্চারা আসছে, বসে আছে।
বাতাসে খেলে বেড়াচ্ছে প্লাস্টিকের একটা সস্তা ফুটবল।
বাচ্চা একটা ছেলে।
দ্রুতগতিতে এগিয়ে আসছে একটা প্লেন, অনেক নিচুতে উড়ছে, ধেয়ে আসছে উপত্যকার ওপর দিয়ে।
তারপর…
প্রতিবার এইসময়ে এসে ধড়ফড় করে ঘুম ভেঙে যায় জন মিল্টনের। এইস্বপ্ন যেন বারবার মনে করিয়ে দেয় ভুল হয়েছে কিছু প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে! কিন্তু কী হয়েছিল অতীতে যা দুঃস্বপ্ন হয়ে তাড়া করে এজেন্ট মিল্টনকে?
হার ম্যাজেস্টি’র সরকারের সবচেয়ে বিশ্বস্ত হিটম্যান জন মিল্টন। ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে মেতে উঠেছে উত্তর কোরিয়া, তাদের এখন ঠেকানো না গেলে সমূহ বিপদ অপেক্ষা করছে বিশ্ববাসীর জন্য। শত্রুর আস্তানায় ঢুকে শত্রু নিধনের মিশন এবার তার কাঁধে। কিন্তু বিপদ! উত্তর কোরিয়ার মাটিতে নামার সাথে সাথেই পড়ে যায় মেজর কিম শিন-জো এর নজরে…
মিল্টনের পিছে লেলিয়ে দেওয়া হয় পুলিশ ফোর্সকে! পারবে কি লক্ষ্যভেদী এজেন্ট তার লক্ষ্য ভেদ করতে…

● পর্যালোচনা ও প্রতিক্রিয়া —
এডভেঞ্চার থ্রিলার দেখে যদি মনে করেন টানটান উত্তেজনা থাকবে বইয়ে তাহলে হতাশ হতে হবে আগেই বলে দিলাম। বইয়ের প্রথম ভাগে সরকার আর সংস্থা নিয়ে লেখা যেখানে তারা ঠিক করে জন মিল্টন উপযুক্ত এই মিশনের জন্য। এনিয়ে বিভিন্ন চুক্তি আর কাহিনী আছে।
কাহিনীর মধ্যভাগ দিয়েই পাঠক আসল অংশে প্রবেশ করবে। যেখানে এজেন্ট মিল্টন একের পর এক রুপ আর জায়গা বদলায়। কিন্তু কীভাবে জানতে হলে পড়তে হবে ❝১০০০ গজ❞। পুলিশ ফোর্সের চোখে কীভাবে মিল্টন ধুলো দিবে আগেই আন্দাজ করেছিলাম তবে ধরপাকড়াও একটা সিন থাকবে আশা করেছিলাম কিন্তু অনুপস্থিত। এমন কিছু থাকলে জমতো ভালো। বইয়ের সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং পার্ট হলো টার্গেট সেট করা আর লক্ষ্যভেদ করা। বইয়ের নাম ১০০০ গজ কেন এই প্রশ্নের উত্তরও পাঠক এই অংশে পেয়ে যাবে। তবে মিশন এত তাড়াতাড়ি শেষ হওয়াতে কিছুটা মনক্ষুন্ন হয়েছি যদিও ছোট গল্প।
বইয়ের শেষ অবধি পড়ে পাঠক সকল রহস্যের সন্ধান পেলেও একটা রহস্য কিন্তু থেকেই যায়। মিল্টনের স্বপ্ন রহস্য! গল্পের শেষেও লেখক রহস্যের খোলসা করবেন না, বিষয়টা খটকা লাগে। তাই গুগল মামার শরণাপন্ন হলাম। খোঁজাখুঁজি করে জানলাম জন মিল্টন একটা সিরিজ যার টোটাল বই বিশটা (দুটা ছোটগল্প আর আঠারোটা উপন্যাস)। তো সিরিজের বাকি বইগুলো কি ঐশ্বর্য প্রকাশ থেকে আসবে? আসলে তা কবে নাগাদ পাঠকের হাতে পৌছাবে?

● লেখনশৈলী ও বর্ণনা —
মার্ক ডওসনের লেখনীর সাথে পরিচয় ❝১০০০ গজ❞ দিয়েই। মেদহীন লেখনী। জন মিল্টন সিরিজ লেখার জন্য আর্মি, ফাইটিং আর অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে যে লেখক অনেক ঘাটাঘাটি করেছেন পাঠক বই পড়ে সহজেই তা বুঝতে পারবে। তবে কাহিনীর মেইন এক্সাইটমেন্ট পার্ট বলতে গেলে শেষ অংশই। এছাড়া আগের অংশে মিল্টনের ছন্দবেশ বদলানো আর জায়গা বদল করাই আছে খালি তাই পাঠক প্রথম অংশ পড়ে কিছুটা হতাশ হতেই পারে।

● অনুবাদ —
অনুবাদ সাবলীল। বিভিন্ন জায়গা আর অস্ত্রসস্ত্রের নাম যে কীভাবে অনুবাদ করেছেন অনুবাদক পড়ার সময় এটাই বারবার ভাবছিলাম। এত খটমটে নাম! উচ্চারণই করেছেন কিভাবে আমি তো স্কিপ করে গেছি। তবে কিছু শব্দচয়ণ কঠিন মনে হয়েছে। অর্থ জানার জন্য গুগল মামার কাছে যেতে হয়েছে।

● চরিত্রায়ন —
কাহিনীর মূল চরিত্র জন মিল্টন, ধূর্ত-নিষ্ঠুর নিবেদিত-প্রাণ এজেন্ট। যেকোনো মূল্যে মিশন কমপ্লিট করা যার একমাত্র উদ্দেশ্য। সহযোগী হিসেবে আছে স্যু ইয়ুং জং এবং তার ভাই কুন জং। কুন জং- কে বইয়ের সেরা চরিত্র মনে হয়েছে আমার কাছে। মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও মিশন ছেড়ে যায়নি সাথে বোনকেও রক্ষা করে গেছে। তার উপর করা নির্যাতনের বর্ণনা পড়ে শিউরে উঠেছিলাম। কতরকমের নির্যাতন যে হতে পারে! প্রতিপক্ষ হিসেবে আছে মেজর কিম শিন জো ও তার সহকারী ইয়ুন জং ম্যু। এছাড়া আরও কিছু ছোটখাটো চরিত্রের উল্লেখ আছে। তবে একটা বিষয় আজব লেগেছে বইয়ে অধিকাংশ কোরিয়ানদের নাম শুরু কিম দিয়ে তারপর অন্য অংশ।

● প্রোডাকশন —
বইয়ের প্রোডাকশনের কথা বলতে হলে প্রথমেই বলতে হয় বাঁধাইয়ের কথা; বইয়ের বাঁধাই মজবুত কিন্তু পেজ উল্টানো গেছে সহজেই। অবশ্য কলেবরে ছোট বই এটাও একটা কারণ। পেজ আর বইয়ের হার্ড কভারের মানও যথেষ্ট ভালো। বইয়ের কোণা সহজে ভেঙে যাওয়ার ভয় নেই। আমার জন্য আরও একটা প্লাস পয়েন্ট যে বইয়ের জ্যাকেট বই থেকে আলগা করা। পড়ার সময় কভার ভাজ হওয়ার ভাবনা নেই খুলে রেখে আরামে পড়া গেছে।

● বানান ও সম্পাদনা —
বইয়ের অল্প কিছু বানান ভুল ও টাইপিং মিস্টেক আছে।

১৮ পৃষ্ঠা- পত্রিকাটা ভিজে গেহে(গেছে) ইতিমধ্যে।
২৪ পৃষ্ঠা- ডাটাবেজ থেকে লোকোটার(লোকটার) ফাইল নামান উনি, নাম পিটার ম্যাকইওয়ান।
২৯ পৃষ্ঠা- পরের খবরে একটা চেস্টনাট ঘোড়ায় চেপে ডিমিলিটারাইজড জোনে সেনা কর্মকান্ড পর্যবেক্ষণ করছেন তরুন নেতা, একটা অচেনা ফুটবল ম্যাচ, দুটো দলই মিল্টনের অপরিচত(অপরিচিত)।
৪৭ পৃষ্ঠা- একটা ইংরেজ পাসপোর্টর(পাসপোর্টের) ফাঁকে গোঁজা আরও কিছু নথিপত্র।
৬৪ পৃষ্ঠা- যদি আর প্রমাণ না থাকে, তাহলে এক মাদকাচ্ছন্ন বেহুঁশ লোকের অর্থহীন বিড়বিড় শুনে এসব হুমকি আমলে নেওয়া ক্ষেপামোরই(ক্ষেপানোরই) নামান্তর।
এরকম আরও কিছু টুকিটাকি ভুল আছে। এছাড়া বিরামচিহ্ন ব্যবহারে কিছু ত্রুটি আছে বিশেষ করে দাঁড়ি বা পূর্ণচ্ছেদ (।)- এ।

● প্রচ্ছদ ও নামলিপি —
প্রথম দেখায় খালি লাল-নীল-কমলা রং-ই দেখেছি। পড়া শেষে আবার ভালো করে দেখার পর বুঝলাম বইয়ের শেষ ভাগের উপর ভিত্তি করে প্রচ্ছদ করা। দারুণ হয়েছে। সম্পূর্ণ কাহিনী না জানা পর্যন্ত আসলে প্রচ্ছদ দেখেও কিছু বুঝার উপায় নেই। নামলিপিও সুন্দর।

হাতে সময় কম কিন্তু মোটামুটি ধাঁচের এডভেঞ্চার থ্রিলার পড়তে চান তাহলে বইটি পড়ে দেখতে পারেন।

0
    0
    Your Cart
    Your cart is emptyReturn to Shop