নিলয় নীলের অনুগল্প ‘হ্যাকার’
হ্যাকার
লেখক: নিলয় নীল
ধরন: সামাজিক, রোম্যান্টিক, অনুগল্প
শিলার ফেসবুক আইডি টা হ্যাক হয়েছে। এতে অবশ্য শিলার কোন দুঃখ বা আক্ষেপ নেই।
শিলা দেশের নামকরা এক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এর ছাত্রী। ফেসবুকে নানা শ্রেণী পেশার মানুষ তার সাথে যুক্ত তার দারুণ লেখালেখির জন্য।
আজ বিকালের পর থেকে কাছের আত্মীয়-স্বজনরা শিলাকে ফোন করতে থাকে।
সবার একই প্রশ্ন এসব উল্টাপাল্টা পোস্ট শিলা শেয়ার কেন করছে। তার কি মাথা খারাপ হয়ে গেলো নাকি হঠাৎ। মোটামুটি কয়েকজনকে- শিলা জানালো, তার ফেসবুক আইডিটা হ্যাক হয়েছে।
এর পরেই শিলার কিছু কাছের বন্ধুবান্ধব ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে শিলার আইডি হ্যাক হওয়ার বিষয়টি জানানোর চেষ্টা করে সবাইকে। যাতে করে কেউ বিভ্রান্ত/ প্রতারিত না হয় কোন ধরনের বার্তায়।
আইডি হ্যাক হওয়ার পরের দিন রাতে হ্যাকার শিলা কে ফোন করেঃ
-হ্যালো! কে বলছেন?
-আমি একজন হ্যাকার, আপনার আইডিটা আমি ই নিয়ন্ত্রণ করছি এখন।
-বেশ তো! কেমন লাগছে নিয়ন্ত্রণ করতে?
-ভালো লাগছে না।আসুন লেনদেন টা শেষ করি।এমন আইডি আমার কাছে অনেক আছে।টাকা পেলেই, আইডি ফিরিয়ে দেই।
-আমার আইডি ফেরত লাগবে না।ওটা আপনি ই চালান।
হ্যাকার বেশ অবাক।এই প্রথম কেউ এভাবে বললো!
-কি অদ্ভুত, এমন তো কেউ আগে বলে নি।আচ্ছা আচ্ছা,টাকা না দিলে আপনার আপত্তিকর ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিব কিন্তু!
-হাহাহা,আপত্তিকর কি ছবি পেলেন আপনি শুনি?
হ্যাকার একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়।কাল রাত হতে আজ রাত পর্যন্ত, ম্যাসেঞ্জার এর অলিগলি ঘুরে কোথাও ব্লাকমেইল করার মত কিছু সে খুঁজে পায় নি।পাবার মধ্যে একটা অদ্ভুত ছবি সে পেয়েছে।কিন্তু ছবিটা আপত্তিকর নয় তবে বেশ অস্বস্তিকর।
স্বাভাবিক চোখ হয়ত কোন নারীকে এমন চেহারায় দেখতে অভ্যস্ত নয়।
হ্যাকার এবার কৌতুহল নিয়ে জিজ্ঞেস করে:
– আচ্ছা আপনি আইডিটা ফেরত কেনো নিতে চাচ্ছেন না?
শিলা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে উত্তর দেয়:
-দেখুন এই পৃথিবীতে আমার সময়টা সম্ভবত খুব বেশি দিন নেই।আর আইডি ফেরাতে টাকার কথা বলছেন? সেই সামর্থ্য আমাদের নেই এখন।আমার পিছনে ইতিমধ্যে আমার পরিবার অনেক অর্থ খরচ করে ফেলেছে।
হ্যাকার এবার বুঝতে পারে সেই অস্বাভাবিক ছবির রহস্য!
শিলা কে প্রশ্ন করেঃ
-আত্নীয় স্বজন অথবা বন্ধুবান্ধব দিয়ে অর্থ সংগ্রহের চেস্টা করছেন না কেনো?
– আমি আসলে নিজেই চাই না এটা। আমার আসলেই ইচ্ছে হয় দ্রুত যাতে মরে যেতে পারি।নিজেকে পরিবারের বোঝা মনে হয়।আর আমার ক্যান্সার টাও বেশ ছড়িয়ে গেছে। লিউকেমিয়া তো, আর কয়েকটা কেমোথেরাপি নিতে পারলে হয়ত বেশি কিছুদিন বাঁচব।কিন্তু আমি টাকা খরচ করে মৃত্যুর অপেক্ষা করতে পারব না।
-অহ!আচ্ছা আপনার আইডিটা ঘেটে দেখলাম,আপনি তো দারুণ লিখেন। ইদানীং কিছু লিখছেন না?
– হ্যা লিখছি কিন্তু লেখা টা হয়ত শেষ করতে পারব না।আর কেমো নিতে নিতে শরীরটাও এখন খুব দুর্বল লাগে।মাথায় শব্দ ঘুরে কিন্তু গাঁথুনি দিতে পারি না তেমন।কখন আবার হুট করে মরে যাই!
হ্যাকার চুপচাপ কথা শুনে যায়।মেয়েটির জন্য অদ্ভুত এক সহানুভূতি কাজ করছে।হয়ত সহানুভূতি হতে একটু বেশি।
শিলা ফোনের ওপার হতে শোনা যায় একজন মহিলার কন্ঠঃ
-শিলা খেতে আয় তোর প্রিয় কলিজা ভূনা করেছি।
শিলা, তার মায়ের কথা বলে ফোন টা রাখতে চায়।হ্যাকার শিলাকে শেষ সম্ভাষণ জানায়…আইডিটা নিয়ে আর কোন কথা হয় না।
প্রায় ৭দিন পর।শিলার নামে একটা পার্সেল আসে।
শিলার মা পার্সেল টা নিয়ে শিলার রুমে যায়। শিলা তখন মাথায় থাকা সামান্য কটা চুল আচড়াচ্ছিল।
মা এসে বললেনঃ
-শিলা তোর নামে পার্সেল। খুলে দেখতো কি!
শিলা বেশ অবাক হলো প্যাকেট টা দেখে! তাকে কে আবার পার্সেল পাঠাবে।সে বেশ কৌতুহল নিয়ে পার্সেল টি খুলে।খুলে দেখে ভিতরে দুটি ১০০০টাকার নোটের বান্ডেল আর একটা খাম।
খামের মধ্যে ছোট্ট একটা চিঠি, তাতে লেখাঃ
প্রিয় শিলা,
আমি একজন জঘন্য মানুষ আমি সেটা জানি।প্রথমেই আপনার আইডি টা ফিরিয়ে দিচ্ছি।আপনার ইমেইল: ******* পাসওয়ার্ড :#####
আপনার অবাক লাগছে এই জঘন্য মানুষ আপনাকে এতগুলো টাকা কেন পাঠালো?
আমি জানি আপনি কারো কাছে সাহায্য চাইবেন না।
তাই এই সাহায্য টা করা।যেটা আপনি না চেয়েও পাচ্ছেন।ইদানীং খুব আকুতি মিনতি করে সাহায্য না চাইলে কেউ সাহায্য করেনা তা আমি জানি।
এই সাতদিন আপনার একটা ধারাবাহিক লেখা পড়লাম,
যেটা আপনি সেই মানুষটি কে নিয়মিত পাঠাচ্ছিলেন ম্যাসেজে। সেই বিশেষ মানুষটিকে, যাকে একমাত্র সুযোগ দিয়েছেন আপনার সামান্য কিছু চুলের বেণী করা দেখতে।যা দেখতে অনেকের চোখেই অদ্ভুত, ভূতুড়ে। তবে আপনার লেখাটার জন্য ই আপনাকে টাকা গুলো পাঠানো। আপনি আর কয়েকটা কেমোথেরাপি নেন।মৃত্যুর কথা আমরা কেউ জানি না তবুও যদি তার মর্জি হয় তবে আপনি আরো কিছুদিন থাকবেন।আরেকটু কস্ট করে লেখাটা শেষ করুন।সবাই জানুক গল্পটা,
কিভাবে শেষ সময়ের প্রান্তে দাঁড়িয়েও নিজের প্রিয় মানুষে ডুবে থাকা যায়! মৃত্যুকে আলিঙ্গন করা যায় অপেক্ষায় থেকে।তবে আমি চাই সৃষ্টিকর্তা আপনাকে সুস্থ করুক।
আর এই টাকাটা আমার নয় এগুলো কিছু ভুক্তভোগী মানুষের।যাদের ফাদে ফেলে আমি অর্থগুলো কজ্বা করেছি।
আপনি জেনে খুশি হবেন আমি এই অনৈতিক আয়ের পথ হতে ফিরে আসছি সেদিনের কথোপকথন এর পর থেকেই।
আপনার ভালো থাকার
প্রত্যাশায়।
অজ্ঞাত
৫দিন পরে কেমো দেওয়ার তারিখ।শিলাকে দেখা যায় হাসপাতালে হাতে একটা ডায়েরী আর কলম।
সমাপ্ত
লেখক: নিলয় নীল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে গল্প লিখে জিতেছেন সাধারণের ভালোবাসা। সৃজনশীল এই লেখক বিজ্ঞাপন বানাতে ভালোবাসেন, ভালোবাসেন আবৃত্তি করতে। আর কন্ঠ দিয়েছেন অগণিত শ্রুতিগল্প, বিজ্ঞাপন আর কবিতায়। অল্প কথায় গল্প বলেন, প্রতিদিনের জীবনের গল্প।